শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ঈশ্বরদী উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য

উপজেলার পটভূমিঃ
বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ‘‘ ঈশ্বরদী উপজেলা ’’ পাবনা জেলার মধ্যে একটি দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। জনসংখ্যার দিক দিয়ে এটি পাবনা জেলার মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম উপজেলা। প্রাপ্ত তথ্য মতে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ খ্রিঃ তারিখে প্রথমে ‘‘ঈশ্বরদী থানা’’ হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এবং দায়িত্বাবলী বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৬০ সালে ‘‘ উন্নয়ন সার্কেল ’’ (আপগ্রেডেড থানা) হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে ‘‘ ঈশ্বরদী উপজেলা ’’ হিসেবে এর নামকরণ করা হয়। ঈশ্বরদী উপজেলাটি পাবনা জেলার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এর উত্তরে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম ও লালপুর উপজেলা, পশ্চিমে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা, দক্ষিণে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা এবং পূর্বে পাবনা জেলার পাবনা সদর ও আটঘরিয়া উপজেলা। এ উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত পদ্মানদী। ২৪°০৩র্ হতে ২৪° ১৫র্ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৯°০র্ হতে ৮৯° ১১র্ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে ১২.৯ মিঃ সমুদ্র সমতল থেকে উপরে উপজেলাটির অবস্থান। ঈশ্বরদী উপজেলার নামকরণ নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। নামকরণ সম্পর্কে তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অধিকাংশের মতে ঈশা খাঁর আমলে এ উপজেলার টেংরী গ্রামে ডেহী/কাচারী (Dehi/Kachari) ছিল। এখানে ঈশা খাঁর রাজস্ব কর্মচারীরা বসবাস করতেন এবং রাজস্ব আদায় করতেন। ঈশা খাঁ এখানে অনেকবার গমন করেছেন। সময়ের ব্যবধানে ঈশা খাঁ ( Isha Khan ) এর Isha এবং Dehi এই শব্দ দু’টির সমন্বয়ে পরিবর্তনের মাধ্যমে Ishwardi (ঈশ্বরদী) এর নামকরণ হয়। এই নামকরণটি বর্তমানে বেশী পরিচিত।

উল্লেখযোগ্য স্থান স্থাপনা

বাংলাদেশ ঈক্ষু গবেষনা ইন্সটিটিউটঃ বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান কার্যালয়টি এ উপজেলার পাবনা-ঈশ্বরদী সহাসড়ক সংলগ্ন অরণকোলা ও বহরপুর মৌজার ২৩৫.০০ একর জমিতে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের স্বল্প বৃষ্টিপাত এলাকার একমাত্র নির্ভরযোগ্য অর্থকরী ফসল ইক্ষু। বিএসআরআই এদেশের একটি অগ্রজ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যেখানে গবেষণা হয় ইক্ষুর উপর এবং চিনি, গুড় ও চিবিয়ে খাওয়াসহ ইক্ষুর বহুমুখী ব্যবহারের উপর। ১৯৫১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে মাত্র ১৭জন জনবল নিয়ে ‘‘ ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র ’’ স্থাপন করে। তখন কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুধু ইক্ষু প্রজনন এবং জাত বাছাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের অধিকতর উন্নয়নকল্পে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের ‘‘ খাদ্য ও কৃষি কাউন্সিল ’’ কেন্দ্রটিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন উন্নতি ছাড়াই ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রটিকে পুনরায় প্রাদেশিক সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ে ফেরৎ দেয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এ কেন্দ্রটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে এ কেন্দ্রটিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন তৎকালীন বাংলাদেশ চিনিকল সংস্থার নিকট হস্তান্তর করা হয়। এ সংস্থাটি ১৯৭৪ সালে ‘‘ ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউট’’ নামে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে।

দ্বিতীয় পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনাকালে (১৯৮০-৮৫) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা ঈশ্বরদী ও ঠাকুরগাঁও- এ ‘‘ স্টাফ ট্রেনিং সেন্টার ’’ স্থাপনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রকল্প পেশ করে। প্রকল্পটি বিবেচনাকালে ‘‘ স্টাফ ট্রেনিং সেন্টার’’ টি ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাথে যুক্ত করে অনুমোদন দেয়া হয় এবং ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউটের নাম পরিবর্তন করে ‘‘ ইক্ষু গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ’’ করা হয়। সরকার ১৯৮৯ সালে একটি কেবিনেট সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার লক্ষ্যে পুনরায় কৃষি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে। ১৯৯৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাহী আদেশ বলে ইক্ষু গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট কে বিলুপ্ত করে ‘‘ বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউট’’ স্থাপন করেন। অতঃপর ১৯৯৬ সালের ১৭ আগস্ট জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউট আইন প্রণীত হয়।

বিএসআরআই দেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। মূলত এ ইন্সটিটিউট হতে দু’ধরনের কাজ সম্পাদিত হয় (ক) ইক্ষুর উন্নত জাত ও উন্নত উৎপাদন কলা কৌশল উদ্ভাবন এবং (খ) উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও উন্নত উৎপাদন কলা-কৌশলসমূহ ইক্ষু চাষীদের মধ্যে বিস্তার ঘটানো। ৮টি গবেষণা কেন্দ্র, ১টি সংগনিরোধ কেন্দ্র এবং ২টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এর গবেষণা উইং। অন্যদিকে প্রযুক্তি হস্তান্তর উইং গঠিত হয়েছে ২টি প্রধান বিভাগ, ৬টি উপকেন্দ্র এবং ৩টি শাখার সমন্বয়ে। প্রযুক্তি হস্তান্তর উইং সাধারণতঃ ইক্ষুচাষী ও সম্প্রসারণ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়। চাষীর জমিতে নতুন প্রযুক্তিসমূহের প্রদর্শনী স্থাপন করে। বিভিন্ন ধরণের প্রকাশনার মাধ্যমে চাষাবাদের নতুন খবরের বিস্তার ঘটায়। চাষীর জমিতে নতুন প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই করে এবং এর ফিড-ব্যাক তথ্য সংগ্রহ করে।
বিএসআরআই এ পর্যন্ত ৩৪টি ইক্ষুজাত উদ্ভাবন ও অবমুক্ত করেছে। এর সবগুলোই উচ্চ ফলনশীল ও অধিক চিনি সমৃদ্ধ। এসব জাতগুলো দেশের চিনিকল এলাকার প্রায় ৯৯% এবং চিনিকল বহির্ভূত গুড় এলাকায় প্রায় ৫৭% এলাকা জুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে।

আঞ্চলিক কৃষি ও ডাল গবেষনা কেন্দ্রঃ পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়কের পাশে আলহাজ্ব মোড়ের উত্তরে এ কেন্দ্র ২টি অবস্থিত। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (আরএআরএস) ১৯৪৬ সালে উন্নত বীজ ও চারা উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘‘ নিউক্লিয়াস সীড মাল্টিপ্লিকেশন ফার্ম’’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৫ সালে এটি হর্টিকালচারাল শষ্যের গবেষণার উদ্দেশ্যে ‘‘ হর্টিকালচারাল রিসার্চ সাব-স্টেশন ’’ নামে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে ‘‘ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ সাব-স্টেশন ’’ নামে উন্নীত হয়। কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ প্রতিষ্ঠানটি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৭৬ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা স্বায়ত্বশাসন লাভ করে এবং তখন এই প্রতিষ্ঠানটি উন্নীত হয়ে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে এ কেন্দ্রটির আওতায় ৪টি ‘‘ ফার্মিং সিস্টেম রিসার্চ সাইট’’ (এফএসআর)সহ ৭টি উপ-কেন্দ্র এবং অন-ফার্ম রিসার্চ ডিভিশন (ওএফআরডি) এর ২৩টি ‘‘ মাল্টি লোকেশন টেস্টিং সাইট’’ (এমএলটি) রয়েছে। রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলা এ কেন্দ্রটির আওতায় রয়েছে।
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এর ক্যাম্পাসে ডাল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান দপ্তর (হেড কোয়ার্টার) অবস্থিত।১৯৯০-৯৫ সালের সিডিসি ফেজ-১ এর আওতায় ১৯৯৪ সালে এই কেন্দ্রে কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এ কেন্দ্রটি ডালশষ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে এ দেশের বিভিন্ন ডালশষ্যের উন্নত ও বেশী উৎপাদনশীল জাত উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। ডাল গবেষণা কেন্দ্রটি এ পর্যন্ত ডালের ২৪টি জাত উদ্ভাবন করেছে যা কৃষক পর্যায়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ক্যাম্পাসে ডাল গবেষণা কেন্দ্র ছাড়াও কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (এটিআই), বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিআইএনএ), বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি (এসসিএ) এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হর্টিকালচার বেস রয়েছে। এ কেন্দ্রটির নিজস্ব ৫৭.৮৩ হেক্টর জমিসহ ক্যাম্পাসে মোট ৮১.২৭ হেক্টর জমি রয়েছে। জাতীয় কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য এ কেন্দ্রটি ১৯৮১ সালে ‘‘ প্রেসিডেন্ট স্বর্ণ পদক ’’ লাভ করেছে।

পাবনা সুগার মিলস লিঃ পাবনা জেলাধীন ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত পাকুড়িয়া মৌজায় ঈশ্বরদী পাবনা মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে পাবনা সুগার মিলস্ লিঃ ও এর সংশ্লিষ্ট স্থাপনাসমূহ অবস্থিত। পাকিস্তান সরকারের ৪৮০০.২৭ লক্ষ টাকা ঋণ সহযোগিতাসহ স্থানীয় মুদ্রায় ৩১২২.৫৫ লক্ষ টাকা এই মোট ৭৯২২.৮২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দৈনিক ১৫০০.০০ মেঃটন আখ মাড়াই ও বাৎসরিক ১৫,০০০.০০ মেঃ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে বিএসএফআইসি এর ব্যবস্থাপনায় এ মিলটি স্থাপনের কাজ আরম্ভ হয়। ১৯৯৭ সালে প্রকল্পের সমাপ্তি হয়। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে মিলটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয় এবং ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু হয়। এইচএমসি লিঃ তক্ষশীলা, পাকিস্তান মিলটির মূখ্য যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।

এ মিলটির অনুমোদিত মোট মূলধনের পরিমাণ ৫,০০০.০০ লক্ষ টাকা। মিলের মোট জমির পরিমাণ ৬০.০০ একর।
এর মধ্যে কারখানা ২৭.০০ একর, আবাসিক ও অন্যান্য ১৮.০০ একর এবং রাস্তা ও লেগুন ১৫.০০ একর। চিনি ও চিটাগুর উৎপাদন ছাড়াও এ মিল হতে ইক্ষু চাষীদের ইক্ষু চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সহায়ক ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। মূলতঃ ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম হতে ঋণ প্রদান শুরু হয়। ২০০৮-০৯ মৌসুমে এ পর্যন্ত ২৫০.৭২ লক্ষ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এবং ২৪৮.৩৩ লক্ষ টাকা ঋণ আদায় করা হয়েছে। ঋণ আদায়ের হার ৯৯%। ২০০৬ সাল হতে আখ চাষীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০০৬ সালে ২৪০ জন, ২০০৭ সালে ২৪০ জন এবং ২০০৮ সালে ২৬০ জন আখ চাষীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

মিলটির প্রতিষ্ঠালগ্নে যে পরিমাণ চিনি উৎপাদনের টার্গেট নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়, পরবর্তীতে কখনোই সে পরিমাণ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। মূলতঃ চিনি উৎপাদনের কাঁচামাল (ইক্ষু) এর উৎপাদন কম হওয়ায় মিলটি কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হচ্ছেনা। প্রতি বছর আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হওয়ার পর মিল চালু হয় এবং চালুর পর নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই মিলটি বন্ধ করতে হচ্ছে। ২০০৮-০৯ মৌসুমে ২৮/১১/২০০৮ খ্রিঃ তারিখে মিলটি চালু হয়, কিন্তু আখের অভাবে ২২/০১/২০০৯ খ্রিঃ তারিখে মিলটি বন্ধ করতে হয়েছে। এ মৌসুমে মোট ৫৬ মাড়াই দিবসে ৬৯,৮৩৯ মেঃটন আখ মাড়াই করা হয়েছে এবং ৪,২৯৮ মেঃটন চিনি এবং ৩,০২৫.২৩ মেঃটন চিটাগুড় উৎপাদিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে দৈনিক গড় মাড়াইকৃত আখের পরিমাণ ১২৫৮.৮৩ মেঃটন। শুরু থেকেই মিলটি লোকসানে ছিল। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে এ মিলটির পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ ৭৭২৫.০৯ লক্ষ টাকা। আখ উৎপাদন বৃদ্ধি করে এ মিলটিকে লাভজনক পর্যায়ে আনা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লিঃ বার্ষিক ১৫,০০০ মেঃটন মিক্সড জিএসএম এর ভিত্তিতে রাইটিং, প্রিন্টিং, ব্রাউনিং, র‌্যাপার, ব্লু ম্যাচ ইত্যাদি গ্রেডের কাগজ উৎপাদনের জন্য ১৯৭০ সালে পাবনা জেলার পাকশীতে পদ্মানদীর তীরে হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিকটবর্তী স্থানে জার্মান কনসোর্টিয়ামের আর্থিক সহায়তায় তৎকালীন ইপিআরডিসি নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস্ স্থাপন করেন। ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের দিয়ার বাঘইল মৌজায় মিলটি অবস্থিত। মিলটির জমির পরিমাণ ১৩৩.৫৪ একর। কারখানাটি স্থাপনের শেষ পর্যায়ে দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ইরেকশনে নিয়োজিত বিদেশী ইরেকটরগণ কারখানাটি কমিশনিং না করেই দেশ ছেড়ে চলে যান। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে কারখানাটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্থানীয় প্রকৌশলী/প্রযুক্তিবিদগণের প্রচেষ্টায় কারখানাটি চালু করা হয় এবং ১৯৭৪ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু হয়। বিদেশী বিশেষজ্ঞ কর্তৃক কারখানাটির গ্যারান্টি টেস্ট না হওয়ায় ডিজাইনে ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে অসমতা থেকে যায়। এই কারখানাটিতে মন্ড উৎপাদনে অাঁশযুক্ত কাঁচামাল হিসেবে ব্যাপাস (আখের ছোবড়া) ব্যবহৃত হত। পর্যায়ক্রমে দীর্ঘদিন চলাচলে বিবিধ ত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়ায় বিগত ১৯৮৮-৮৯ সনে কারখানাটি বিএমআরই করা হয়। যথারীতি উৎপাদন কার্যক্রম বিএমআরই এর পর শুরু হয়। প্রতিদিন কাগজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬০ মেঃটন। কাঁচামাল হিসেবে পুরাতন ও ব্যবহৃত কাগজ ব্যবহার করা হত। ইতোমধ্যে বিগত ১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছর থেকে উক্ত কাঁচামালের অস্বাভাবিক স্বল্পতা দেখা যায়। যার প্রেক্ষিতে ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে সবুজ পাট হতে মন্ড উৎপাদনের জন্য স্থাপিত গ্রীণ জুট প্রকল্পটি পরিত্যাক্ত হওয়ায় ওয়েস্ট পেপার থেকে মন্ড উৎপাদনের জন্য ব্যবহারের মাধ্যমে মন্ডের ঘাটতি কিছুটা মেটানো হয় এবং কাগজ উৎপাদনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। কিন্তু এসব বিবিধ কারণে কারখানাটি কোন সময়ই পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় চালানো সম্ভব হয়নি। ফলে মিলটি চালুর পর থেকে অব্যাহতভাবে লোকসান দিয়েছে।

কাগজ উৎপাদনে মোট ব্যয়ের ২৫% এনার্জি খাতে ব্যয় হয়। তম্মধ্যে জ্বালানী খাতে ১৫% ও বিদ্যুৎ খাতে ১০% ব্যয় হয়। বিদ্যুৎ চাহিদা পিডিবি বিদ্যুৎ থেকে এবং জ্বালানী চাহিদা ফার্নেস ওয়েল ব্যবহার করে মেটানো হত।পেট্রো বাংলা কর্তৃক বিগত ২০০০-২০০১ সনে গ্যাস সরবরাহ নেটওয়ার্ক অত্র কারাখানা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ায় ভবিষ্যতে গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে উল্লিখিত খাতসমূহের ব্যয় হ্রাস করা সম্ভব হতে পারে। উৎপাদন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস লাইন কারখানার প্রধান গেট পর্যন্ত এলেও বাস্তবে সংযোজন না দিয়েই সরকার কর্তৃক বিগত ৩০/১১/২০০২ তারিখ ৯২৬ জন জনবলকে পে-অফ (চাকুরীচ্যূত) করতঃ কারখানাটি বন্ধ করা হয়।
১৯৮৯ সনের সমাপ্ত বিএমআরই প্রকল্পের পর কারখানাটিতে যথারীতি উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। সরকারী সিদ্ধান্ত মতে গত ৩০/১১/২০০২ তারিখ সমূদয় জনবল (শ্রমিক ৫৮২ জন, কর্মচারী ২৬৭ জন, কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ক্যাডারভূক্ত ৫২ জন, কর্মকর্তা কারখানা পর্যায়ে ২৫জন ) সর্বমোট ৯২৬ জন কে পে-অফ করতঃ কারখানা বন্ধ করা হয়। পে-অফ এর কারণে বন্ধের পর বিসিআইসি জয়েন্ট ভেঞ্চারের মাধ্যমে চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং নিম্নোক্ত তারিখ সমূহে ইওআই আহবান করেঃ ১ম ইওআই আহবান করা হয় ১০/০৪/২০০৫ খ্রিঃ তারিখ। উক্ত আহবানকৃত ইওআইতে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স স্পেক্ট্রা জেনেটিস, দরপত্র দাখিল করেন। যা মন্ত্রণালয়ের পত্র সূত্র নং- শিম/স্বস(বিসিআইসি)পার-২২/২০০৫/৪১৩ তারিখ ১৫/৬/০৬ খ্রিঃ বাতিল বলে গণ্য হয়। ২য় ইওআই আহবান করা হয় গত ১৭/৮/০৬ খ্রিঃ তারিখ। উক্ত দরপত্রে ৬(ছয়)টি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে মেসার্স মেঘনা গ্রুপ, হোসেন পাল্প এন্ড পেপার মিল, মাস্ক গ্রুপ, জাপান বাংলাদেশ গ্রুপ, নিটোল পাল্প এন্ড পেপার, রানা এক্সপোর্ট লিঃ দরপত্র সংগ্রহ করে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাক্স গ্রুপ দরদাতা দরপত্র দাখিল করেন। যা পরবর্তীতে পত্র নং- শিম/স্বস/বিসিআইসি/পার-২৭/২০০৬/৬৩৪ তারিখ ৫/১১/২০০৬ মাধ্যমে বাতিল পূর্বক পূনঃ দরপত্র আহবানের জন্য নির্দেশ হয়। ৩য় বার ইওআই আহবান করা হয় ০১/২/২০০৭ তারিখ। এ সময় ২টি দরদাতা যথাক্রমে মেসার্স হামিম গ্রুপ, মাক্স গ্রুপ দরপত্র/ইওআই দাখিল করেন। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের পত্র নং প্রমকা/প্রাঃকঃ/উপ-পরি -১/০৭/৫৪ তারিখ ০৪/১০/০৭ খ্রিঃ এর সিদ্ধান্ত মতে মিলটি জয়েন্ট ভেঞ্চারের পরিবর্তে বে-সরকারীকরণ খাতে চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পে-অফ এর পর জয়েন্ট ভেঞ্চার/বে-সরকারীভাবে চালানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানো হলেও অদ্যাবধি চালু করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য যে, যৌথ উদ্যোগে বিগত ২০০৩ সনে বিসিআইসি’র গঠিত কমিটির সুপারিশ ২৩/১২/২০০৩ খ্রিঃ তারিখ পূনঃ চালানোর জন্য মেশিনারী ও ইকুইপমেন্ট ক্রয় এবং চলতি মুলধন বাবদ ব্যয়ের জন্য ১৬.০০ কোটি টাকা সরকারী ঋণ প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছিল, যার সূত্র নং বিএন্ডসি/কর্ড/৬০০.১৪/২১৬ তারিখ ০৭/১২/০৩ খ্রিঃ। যা পরবর্তীতে ০৮/০৪/২০০৪ খ্রিঃ মোতাবেক খরচের পরিমাণ আনুমানিক নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০.০০ কোটি টাকা। কোন প্রস্তাবনাই আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
যেহেতু দীর্ঘ ৬ বছরের অধিক সময় কারখানাটি বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেহেতু স্বাভাবিক ক্ষয়ক্ষতিজনিত কারণে ধীরে ধীরে এর কার্যকারিতাও হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে মিলটি পু্নঃ চালুর ক্ষেত্রে মেশিনারী ও ইকুইপমেন্ট ক্রয়, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ চলতি মুলধনের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে।
২০০৭ সনে জয়েন্ট ভেঞ্চারের পরিবর্তে মিলটি বিরাষ্ট্রীয়করণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করলে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে ২০০৮ সনের শেষার্ধ হতে অদ্যাবধি ২ বার দরপত্র প্রাইভেটাইজেশন কমিশন হতে আহবান করা হয়।

সর্বশেষ আহবানকৃত দরপত্রের কার্যকারিতা এখন পর্যন্ত প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে। ফাইনাল কি সিদ্ধান্ত হয়েছে সে ব্যাপারে অদ্যাবধি জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি নতুন সরকার দেশ পরিচালনার ভার গ্রহণ করায় বন্ধ কারখানাগুলি পুনঃ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করায় কারখানাটি পুনঃ চালুর লক্ষ্যে বিসিআইসি কর্তৃক একটি উচ্চ পর্যায়ের টীম গত মার্চ, ২০০৯ মাসের শেষার্ধে গঠন করা হয়েছে। বিসিআইসি কর্তৃক গঠিত উচ্চ পর্যায়ের টীম গত ২১/৩/০৯ ও ২২/০৩/০৯ খ্রিঃ তারিখ এ কারখানা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন। উক্ত টীম কর্তৃক কারখানাটি চালুর বিষয়ে রিপোর্ট বাস্তবায়নের বিষয়ে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে অদ্যাবধিও কাজ চলছে। পে-অফ জনিত কারণে বন্ধ কারখানাটি পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়াধীন আছে।

ঈশ্বরদী ইপিজেডঃ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা সংক্ষেপে ইপিজেড ঈশ্বরদী উপজেলা সদর হতে প্রায় ৬ কিঃ মিঃ দক্ষিণে অবস্থিত। বেপজা’র উচ্চ পর্যায়ের কমিটি কর্তৃক এলাকাটি ইপিজেড প্রকল্প হিসেবে অনুমোদন প্রাপ্ত হয়। সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এরূপ একটি প্রকল্প উত্তরবঙ্গে এই প্রথম। প্রকল্পভূক্ত এলাকার জমির পরিমাণ ১২৮.৪৬ একর, প্রশাসনিক এলাকা ১৮.৮৫ একর, আবাসিক এলাকা ৩৬.৯৫ একর। এছাড়াও ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের কার্যক্রমভূক্ত এলাকা ১২৪.৭১ একর। এপ্রিল, ২০০৫ মাসে এ জোনটির কার্যক্রম শুরু হয়। ১ম ফেজে প্লট সংখ্যা ১৫৮টি, প্রত্যেক প্লটের পরিমাণ ২০০০ বর্গ কিঃমিঃ। ১৩১টি প্লট বিভিন্ন ইনভেস্টরকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২টি প্লট ইনভেস্টরদেরকে বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ৬টি প্লট সংরক্ষিত রয়েছে এবং ১৯টি প্লট খালি রয়েছে।
বর্তমানে ৫টি শিল্প কারখানা চালু রয়েছে এবং ৬টি কারখানা নির্মাণাধীন এবং বাস্তবায়নাধীন আছে। ২০০৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ১৪,৫৪৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার এ জোনে ইনভেস্টমেন্ট করা হয়েছে। ৭.৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার পরিমাণ উৎপাদিত দ্রব্য রপ্তানী করা হয়েছে। স্থানীয় ১১০৭ জন কর্মচারী এ জোনে নিয়োগ করা হয়েছে।
এ ইপিজেড- টিতে কাস্টমস্ অফিস, নিরাপত্তা অফিস, জোন সার্ভিসেস কমপ্লেক্স, মেডিকেল সেন্টার, ফায়ার স্টেশন, পুলিশ ক্যাম্প, নিরাপত্তা ব্যারাক, রেস্ট হাউস, নিজস্ব টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, গ্যাস বিতরণ অফিস এবং ব্যাংকিং সুবিধা রয়েছে। বর্তমানে দেশীয় এন্টারপ্রা্ইজ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, চীন, হংকং, তুর্কিস্তান এবং ভারতের এন্টারপ্রাইজ রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যমান মিল কারখানা হতে উৎপাদিত দ্রব্যগুলো হল তামার তার, এংলো এবং ফ্লাট টিউব, সোয়েটার, পলিথিন দ্রব্য, গার্মেন্টস পোষাক, পলিস্টার, প্লাস্টিক দ্রব্য, মোজা, ব্যাটারী, বিদ্যুৎ, তুলা, ফ্যাব্রিক্স প্রভৃতি। বিদেশী উদ্যোক্তাগণ জোনটি পরিদর্শন করে বিনিয়োগে বেশ আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমানে ঈশ্বরদী বিমান বন্দরটি বন্ধ রয়েছে। বিমান বন্দরটি চালু হলে বিদেশী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং এ এলাকাটি এদেশের বেশ লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে ঈশ্বরদীবাসী মনে করেন।

হার্ডিঞ্জ ব্রীজ: হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ঈশ্বরদী উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। ঈশ্বরদী উপজেলা সদর হতে প্রায় ৮ কিঃ মিঃ দক্ষিণে পাকশী ইউনিয়নে পদ্মা নদীর উপর ব্রীজটি অবস্থিত। ১৮৮৯ সালে তৎকালীন অবিভক্ত ভারত সরকার আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও উত্তরবঙ্গের সাথে কলকাতার যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে পদ্মানদীর উপর ব্রীজ নির্মাণের প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে ব্রীজ নির্মাণের মঞ্জুরী লাভের পর বৃটিশ প্রকৌশলী স্যার রবার্ট গেইল্স সেতু নির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।১৯০৯ সালে ব্রীজ নির্মাণের সার্ভে শুরু হয়। ১৯১০-১১ সালে পদ্মার দুই তীরে ব্রীজ রক্ষার বাঁধ নির্মাণ হয়। ১৯১২ সালে ব্রীজটির গাইড ব্যাংক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। পাশাপাশি ব্রীজটির গার্ডার নির্মাণের কাজ শুরু হয়। অতঃপর ব্রীজটির গার্ডার নির্মাণের জন্য কূপ খনন করা হয়। ২৪ হাজার শ্রমিক দীর্ঘ ৫ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৯১৫ সালে ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। তৎকালীন ভাইসরয় ছিলেন লর্ড হার্ডিঞ্জ। তাঁর নামানুসারে ব্রীজটির নামকরণ করা হয় হার্ডিঞ্জ ব্রীজ। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১ শত ৬৪ টাকা। ব্রীজটির দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৮ শত ফুট। ব্রীজটিতে ১৫টি স্প্যান আছে। ব্রীজটি ঈশ্বরদী ভেড়ামারা সীমানায় পদ্মানদীর উপর অবস্থিত। ব্রীজটি দিয়ে শুধু ট্রেন চলাচল করে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্রীজটির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।

লালন শাহ সেতুঃ নদীমাতৃক বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহৎ সড়ক সেতু লালনশাহ্ সেতু। এটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার অন্তর্গত পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রীজ সংলগ্ন। ২০০১ সালের ১৩ জানুয়ারী মোতাবেক ৩০ পৌষ, ১৪০৭ বঙ্গাব্দে রোজ শনিবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৭ মে, ২০০৪ সালে । যানবাহন চলাচল আরম্ভ হয় ১৮ মে, ২০০৪ সালে।
যানবাহন চলাচল উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ব্রীজটি ১৭৮৬ মিটার লম্বা, ১৮.১০ মিটার প্রস্থ এবং এতে ১৭টি পিলার/খুটি রয়েছে। একটি খুটি হতে আরেক খুটির দূরুত্ব ১০৯.৫০ মিটার। তবে ব্রীজের দুই পাশের ঝঃধৎঃরহম চড়রহঃ এ দুটি খুটি পাশাপাশি স্থাপিত। যার দুরুত্ব ৭১.৭৫ মিটার। ব্রীজের কানেকটিং রোড ১৬.০০ কিঃ মিঃ। ব্রীজের পশ্চিম পার্শ্বে ৬.০০ কিঃ মিঃ (ভেড়ামারা- কুষ্টিয়া)। পূর্ব পার্শ্বে পাকশী- ঈশ্বরদী)। ব্রীজটি দুই লাইন বিশিষ্ট। ব্রীজের মাঝে একটি ডিভাইডার রয়েছে। পদ্মানদীর উপর লালনশাহ্ সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের সাথে উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সংক্ষিপ্ত ও সহজ হয়েছে।

ঈশ্বরদী বিমান বন্দরঃ ঈশ্বরদী বিমান বন্দরটি উপজেলা সদর হতে প্রায় ৫কিঃমিঃ পশ্চিমে অবস্থিত। ৪৩৬.৬৫ একর জমি বাংলাদেশ বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নামে অধিগ্রহণ করে স্থাপনার নির্মাণ কাজ শেষে ২৬/০৩/১৯৬১ খ্রিঃ তারিখে ঈশ্বরদী বিমান বন্দরে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট প্রথম চালু হয়। দীর্ঘদিন বিমান বন্দরটি চালু থাকার পর ০৫/০৪/১৯৯০ খ্রিঃ তারিখে ১ম বারের মত বন্ধ হয়ে যায়। ১৭/০৭/১৯৯৪ খ্রিঃ তারিখে বিমান বন্দরটি পুনরায় চালু হয়। কিন্তু ০৩/১১/১৯৯৬ খ্রিঃ তারিখে পুনরায় বাংলাদেশ বিমান ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। এর পর ১০/০৫/১৯৯৮ খ্রিঃ তারিখ হতে এ বিমান বন্দর হতে এয়ার পারাবত ফ্লাইট চালু হয়।
কিছুদিন চলার পর ২৮/০৬/১৯৯৮ খ্রিঃ তারিখ এ ফ্লাইটটিও বন্ধ হয়ে যায়। অদ্যাবধি বিমান বন্দরটিতে সব ধরণের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ আছে। তবে কোন সিডিউল ফ্লাইট না থাকলেও অফিসিয়ালভাবে বিমান বন্দরটি চালু রয়েছে। যোগাযোগ যন্ত্রপাতি কার্যক্রম রয়েছে। বিমান শাখায় ১৫জন জনবল কর্মরত আছে, তবে কন্ট্রোল টাওয়ার/ফায়ারের জনবল নেই। বিমান বন্দরের রানওয়ে, এপ্রোচ, টেক্সিওয়ে সবকিছু কার্যক্ষম আছে। ৪৩৬.৬৫ একর জমির মধ্যে বিমান বন্দর সংলগ্ন মিলিটারী ফার্মকে দেওয়া আছে ২৯০.৭৪ একর। বিমান বন্দরের আওতায় ১৪৫.৯১ একর জমি আছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এখন বিমান বন্দরের দখলে রয়েছে মাত্র ৯৬.০০ একর জমি। অবশিষ্ট জমি মিলিটারী ফার্মের দখলে আছে। বাংলাদেশ সরকার তথা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিমান বন্দরটি পুনরায় চালু করার আবেদন জানাচ্ছে ঈশ্বরদীবাসী।

রুপপুর পারমানবিক শক্তি প্রকল্পঃ ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর, চর রূপপুর ও দিয়াড় বাঘইল এ ৩টি মৌজায় প্রকল্পটি অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি প্রকল্প। দেশের বিদ্যুৎ খাতের প্রার্থিত প্রবৃদ্ধি সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের অন্যতম প্রধান শর্ত বলে বিবেচিত। বিদ্যুৎ খাতের চাহিদা ব্যবস্থাপনায় পারমানবিক প্রযুক্তি একটি সুবিধাজনক প্রকল্প। এ প্রযুক্তির প্রেক্ষিতে ৬০ এর দশকে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার রূপপুরকে এ প্রকল্পের স্থান হিসেবে নেয়া হয়েছিল।
১৯৬৩ সালে ঈশ্বরদী থানার রূপপুর এলাকায় ২৫৯.৯৩ একর জমি এ প্রকল্পের জন্য হুকুম দখল করা হয়। ০৪/০২/১৯৬৭ খ্রিঃ তারিখে জেলা প্রশাসক, পাবনা কর্তৃক উল্লিখিত জমি তদানিন্তন পাকিস্তান এটোমিক এনার্জি কমিশন (বর্তমানে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন) এর নিকট হস্তান্তর করা হয়। ১৯৬৪ সালে প্রকল্প স্থাপনের সুবিধার্থে আবাসিক বাসভবন তৈরীর জন্য ৩১.৫৮ একর জমি হুকুম দখল করা হয় এবং উক্ত সালেই তদানিন্তন পাকিস্তান এটোমিক এনার্জি কমিশন এর নিকট হস্তান্তর করা হয়। আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন টাইপের (গ্রেড-৩ =৪০টি, গ্রেড-৪ =১২টি এবং গ্রেড- ৫=২০টি) মোট ৭২টি আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ হাতে নেয়া হয়েছিল। এসব ভবনের কাজ আনুমানিক ৬০% সম্পন্ন হওয়ার পর স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্বেই নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অদ্যাবধি অর্ধনির্মিত এসব ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। এগুলো বর্তমানে পরিত্যক্ত/ব্যবহারের অনুপযোগী। এছাড়াও আবাসিক এলাকায় কিছু ভৌত অবকাঠামো, ৭৫০ কেভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন (বর্তমানে অকেজো), ২০ অশ্ব শক্তিসম্পন্ন একটি পানির ট্যাংকসহ পাম্প হাউস, ২ কক্ষ বিশিষ্ট ১টি পাকা মেট্রোলোজিক্যাল বিল্ডিং, ১টি সেমি পাকা অতিথি ভবন এবং ৪ কক্ষ বিশিষ্ট ১টি অস্থায়ী কার্যালয় রয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিদেশী উদ্যোক্তা প্রকল্পটি পরিদর্শন করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে আর সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। কারিগরি যথার্থতা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সমস্যার জন্য প্রকল্পের কাজ অদ্যাবধি শুরু হয়নি। তবে অর্থ সংস্থানই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে প্রধান অন্তরায় বলে বিবেচ্য। প্রকল্প এলাকার অব্যবহৃত ২৫৯ একর জমি ১৯৭৮ সাল হতে ভূমিহীন চাষীদের চাষাবাদের জন্য একসনা লীজ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ১জন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১৮জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত আছেন। এই এলাকাটির বিপুল পরিমাণ জমি ও সম্পদ অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে উত্তরাঞ্চলসহ সমগ্র দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করে জানা যায়। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। গত ১৫/১০/২০০৮ খ্রিঃ তারিখ কোরিয়ান অ্যামব্যাসেডর এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান যৌথভাবে প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন। সর্বশেষ ২৫/০৪/২০০৯ খ্রিঃ তারিখ শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান এ প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন। আশা করা যায়, শীঘ্রই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হবে।

ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনঃ বৃটিশকাল থেকেই ঈশ্বরদী একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন। এ ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটি পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মিত হওয়ার পূর্বে বর্তমান ঈশ্বরদী এয়ার পোর্ট এর নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল। সেই সময় পদ্মানদীর পশ্চিম পাড়ে রেলওয়ে ঘাট এবং পূর্ব পাড়ে রেলওয়ে সাড়া ঘাট লাইন ছিল। এপাড় ওপাড় নদী পথে রেলওয়ে ফেরীতে যাত্রী ও মালামাল পারাপার করা হত।পরে পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু চালু হওয়ার পর ঈশ্বরদী স্টেশনটি বর্তমান স্থানে অবস্থিত হয়। সেই থেকে ভেড়ামারা স্টেশন হতে সোজা পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু পার হয়ে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন হয়ে আজিমনগর ও আব্দুলপুর পর্যন্ত নতুন লাইন চালু হয়। ০১/৭/২০০৯ খ্রিঃ সাঁড়া-ঈশ্বরদী হতে ভাঙ্গুড়া স্টেশন পর্যন্ত রেললাইন চালু হয়। বর্তমানে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ঈশ্বরদীর সাথে সংযুক্ত। এগুলো হল ঈশ্বরদী-খুলনা, ঈশ্বরদী-রাজশাহী, ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর এবং ঈশ্বরদী- ঢাকা।

উপজেলা ভিত্তিক ইউনিয়ন


উপজেলা ভিত্তিক ইউনিয়নের নাম
ইউনিয়ন পরিষদের পোস্টাল ঠিকানা
চেয়ারম্যানের নাম
চেয়ারম্যানের পোস্টাল ঠিকানা
পাকশী ইউনিয়ন
ডাক-পাকশী, জেলা- পাবনা
পোস্ট কোডঃ ৬৬২০
মোঃ আবুল কালাম আজাদ
গ্রাম-যুক্তিতলা , ডাক-পাকশী
জেলা-পাবনা, পোঃ কোডঃ ৬৬২০
সাহাপুর ইউনিয়ন
ডাক-বাঁশেরবাদা জেলা- পাবনা, পোস্ট কোডঃ ৬২০
মোঃ জিয়াউল ইসলাম সন্টু সরদার
গ্রাম-রহিমপুর, ডাক-দীঘা
জেলা-পাবনা পোঃকোডঃ ৬৬২০
ছলিমপুর ইউনিয়ন
ডাক-জয়নগর জেলা- পাবনা
পোস্ট কোডঃ ৬৬২০
মোঃ ইসরাইল হোসেন
গ্রাম-বড়ইচরা ডাক-জয়নগর
জেলা-পাবনা পোঃ কোডঃ ৬৬২০
লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়ন
ডাক-লক্ষিকুন্ডা জেলা- পাবনা
পোস্ট কোডঃ ৬৬২০
মোঃ তোরাব আলী বিশ্বাস
গ্রাম-বিলকেদার, ডাক-লক্ষিকুন্ডা
জেলা-পাবনা, পোঃ কোডঃ ৬৬২০
মুলাডুলি ইউনিয়ন
ডাক-মুলাডুলি জেলা- পাবনাপোস্ট কোডঃ ৬৬২০
মোঃ সিরাজুল ইসলাম সরদার
গ্রাম-সরাইকান্দি ডাক-মুলাডুলি
জেলা-পাবনা পোঃ কোডঃ ৬৬২০
সাঁড়া ইউনিয়ন
ডাক-ধাপাড়ী জেলা- পাবনা
পোস্ট কোডঃ ৬৬২০
মোঃ সাহাবুল আলম
গ্রাম-আরমবাড়ীয়া ডাক-ধাপাড়ী
জেলা-পাবনা পোঃ কোডঃ ৬৬২০
দাশুড়িয়া ইউনিয়ন
ডাক-দাশুড়িয়া জেলা- পাবনা
পোস্ট কোডঃ ৬৬২০
মোঃ আক্তারুজ্জামান আক্তার
গ্রাম-মুনশিদপুর ডাক-দাশুড়িয়া
জেলা-পাবনা পোঃ কোডঃ ৬৬২০






ঈশ্বরদী উপজেলার মানচিত্র




এক নজরে ঈশ্বরদী উপজেলাঃ
উপজেলার নাম
ঈশ্বরদী
আয়তন
২৪৬.৯০ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা
৩,২২,৪৯৬
ঘনতবসতি
১,৩০৬.১৮ বর্গকিলোমিটার
নির্বাচনী এলাকা
৭১, পাবনা-৪
ইউনিয়ন
০৭ টি
পৌরসভা
1 টি
খানা
৬৯,৬১১ টি
মৌজা
১২৮ টি
গ্রাম
২৫৮ টি
সরকারী হাসপাতাল
০৩ টি(বাংলাদেশ রেলওয়ের ০২ টি সহ)
স্বাস্থ্য কেন্দ্র/ক্লিনিক
০৭ টি
কমিউনিটি ক্লিনিক
২৯ টি
পোষ্ট অফিস
১০ টি
নদ নদী
০১ টি (পদ্মা)
হাট-বাজার
২২ টি
ব্যাংক
২০ টি